প্রাসঙ্গিক তথ্য
বাংলাদেশে উৎপাদিত ফলের তালিকা তৈরি করতে হবে। ফলের সহজলভ্যতা এবং ব্যবহারের ভিত্তিতে ফলকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যাবে। পুষ্টি উপাদানের তালিকা মোতাবেক কোন ফলে কি পরিমাণ উপাদান পাওয়া যাবে তা নিরূপণ করা যাবে।
উপকরণ
১) বিভিন্ন প্রকার ফল
২) বিভিন্ন প্রকার ফলের পুষ্টি উপাদানের তালিকা
৩) ফল রাখার পাত্র এবং টেবিল
৪) ফল কাটার জন্য আরোলা চাকু, কাটা চামচ, চিনামাটি বা কাচের পাত্র
৫) কাগজ, কলম, স্কেল বা স্লাইড ক্যালিপার, নিক্তি, হ্যান্ড গাভস (হাত মোজা)
৬) পানি
কাজের ধাপ
১) সংগ্রহকৃত ফলগুলোর তালিকা তৈরি করতে হবে ।
২) ফলের ওজন, আকার, আকৃতি ও রং ভালোভাবে দেখে পৃথক পৃথক ভাবে
৩) ফলের ত্বকের মসৃণতা, পাকা বা কাঁচা লক্ষ করে তা লিখতে হবে ।
৪) ফল একটা একটা করে কাটতে হবে ।
৫) ফলের ভিতরে আহার উপযোগী অংশের ওজন নিতে হবে ।
৬) ফলের কাটা অংশ চামচ দ্বারা নিয়ে টক বা মিষ্টতা পরীক্ষা করতে হবে ।
৭) একটি একটি করে ফল কেটে ৫ নং ক্রমিকে বর্ণিত বিষয়গুলো খাতায় চার্ট আকারে লিখতে হবে।
৮) আহার উপযোগী অংশের পরিমাণ দেখে একটি ফলে কি পরিমাণ উপাদান থাকতে পারে তা নির্ণয় করতে হবে ।
ফল | ফলের স্বাদ | ফলের রং | ফলের ওজন (গ্রাম) | ওজন (গ্রাম) | শতকরা হার |
বিভিন্ন ফলের পুষ্টি মানের চার্ট তৈরিকরণ ও বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফলে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের পরিমানের চার্ট তৈরী ।
ফল চাষের সমস্যাবলি ও সমাধানের তালিকা প্রস্তুতকরণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
অঞ্চল বিশেষে কী কী ফল উৎপন্ন হয় তা জানতে হবে । ফলের উৎপাদন ও ফলনের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে । কৃষকের অর্থনৈতিক অবস্থা, ফলের চাহিদা ও বাজার ব্যবস্থা, নার্সারী, ফল সংরক্ষণের সুবিধা ইত্যাদি বিষয়ে জরীপ করতে হবে । কৃষকদের আগ্রহ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, খাদ্যাভ্যাস, পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদি মৌলিক বিষয়সমূহ জানতে হবে ।
উপকরণ
(১) ফল চাষের জন্য তথ্যাভিত্তিক চার্ট (চাষকৃত জমির পরিমাণ, ফলন, জমির প্রাপ্যতা ইত্যাদি)
(২) অঞ্চল ভিত্তিক বৃষ্টিপাত, মাটির কধুরতা ও মৃত্তিকা জরিপ ম্যাপ
(৩) কাগজ, কলম, বার্ডে, চক, ডাষ্টার
(৪) মাটি পরীক্ষার যন্ত্র, ঔষধ প্রয়োগ যন্ত্র, প্যাকিং সামগ্রী
(৫) উন্নত জাতের চারা, বাগান পরিচর্যার যন্ত্রপাতি, বই ইত্যাদি ।
কাজের ধাপ
(১) ফল চাষের সমস্যাগুলোর সার্বিক তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। এ জন্য ছক তৈরি করে জরীপ করতে হবে।
(২) ফল চাষে আর্থসামাজিক সমস্যার তালিকাগুলো পৃথকভাবে প্রণয়ন করতে হবে ।
(৩) ফল চাষে কারিগরি সমস্যাগুলো পৃথকভাবে প্রণয়ন করতে হবে ।
(৪) সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য সুপারিশ করা যেতে পারে ।
ক) আর্থসামাজিক সমস্যাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১) জমির স্বল্পতা
২) উন্নত বীজ বা চারা কলমের অভাব ।
৩) সার, সেচযন্ত্রপাতির মূল্য বেশি ও দুষপ্রাপ্যতা
৪) কীটনাশক ঔষধ ও প্রয়োগ যন্ত্রপাতির দুষ্প্রাপ্যতা
৫) কৃষকের দারিদ্রতা ও ঋণগ্রস্থতা,
৬) আর্থিক ঝুঁকির আশঙ্কা
৭) গতানুগতিক প্রথায় চাষাবাদ করা
৮) বাজারজাতকরণ সুযোগের অভাব
৯) ফসল বীমার প্রচলন না থাকা
১০) ফলের বাজার মূল্যের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ।
(খ) কারিগরি সমস্যাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো ।
১) কৃষকের ফল চাষের বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাব
২) মাটি ও আবহাওয়ার প্রকৃত তথ্য স্বল্পতা এবং
৩) প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কিত পূর্বাভাস সময়মত প্রচারের ব্যবস্থা না থাকা
৪) ফল সংরক্ষণের জন্য হিমাগার ও পরিবহনে হিমায়িত গাড়ীর অভাব,
৫) ফল সংগ্রহ কৌশল, গ্রেডিং ও প্যাকিং পদ্ধতি সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব ।
ফল চাষের সমস্যাগুলোর সম্ভাব্য সমাধান নিম্নোক্ত ভাবে করা যায়:
(১) সমবায় ব্যবস্থা চালু করা
(২) নতুন কৌশল উদ্ভাবন ও দেশ বিদেশ হতে উন্নত প্রযুক্তি সংগ্রহ
(৩) সকলের জন্য কৃষি শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করণ
(৪) ঋণ সহজীকরণ ও বীমার ব্যবস্থা চালু করা ।
(৫) সার, বীজ, ঔষধ ও সেচ যন্ত্র সরবরাহ সহজ লভ্য ও নিশ্চিত করা
(৬) হিমাগার ও শিল্পকারখানা স্থাপন করা
(৭) প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রদান ও আবহাওয়া পঞ্জিকা প্রণয়ন
(৮) বাজার ব্যবস্থা ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন
৯) ভাল কৃষকদেরকে উৎসাহ প্রদানের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা
(১০) শিক্ষিত যুবকদের বিভিন্নভাবে সুবিধা প্রদান
(১১) বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক পদার্থের (সার, হরমোন) মূল্য কম করা ।
বিজ্ঞানসম্মত ফল বাগান স্থাপন করতে হলে বাগানে গাছ লাগানোর জন্য নকশা তৈরি করা অবশ্যই প্রয়োজন । বিভিন্ন পদ্ধতিতে ফল বাগানের নকশা বা পরিকল্পনা করা হয়। এ পদ্ধতিগুলো হলো:- ১। আয়তকার পদ্ধতি ২ । বর্গাকার পদ্ধতি ৩ । ত্রিভুজাকার পদতি ৪ । ষড়ভুজী পদ্ধতি ৫। কুইনকাংশ পদ্ধতি ৬ । সমচাল পদ্ধতি এবং সিড়ি পদ্ধতি ।
ফল গাছ চাষের জন্য নকসা তৈরি ও গাছের সংখ্যা নির্ণয় ।
বর্গাকার পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর নকশা ও গাছের সংখ্যা নির্ণয় ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
জমি সমতল কিনা তা প্রথমে জানতে হবে । কেননা পাহাড়ী জমিতে বর্গাকার, আয়তকার, ত্রিভুজাকৃতি বা ষড়ভুজী পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় । এছাড়া জমি সমতল অথচ জমির আইল আঁকাবাকা বা অসমান, সেক্ষেত্রে জমির ম্যাপ দেখে কাগজে প্রথমে নকশা করে নিতে হবে। জমির আইল আঁকাবাকা বা জমি অনিয়মিত আকারের হলে সে ক্ষেত্রে অনেক সময় গাছ হতে গাছের দূরত্ব পরিবর্তন করা প্রয়োজন হতে পারে ।
উপকরণ
(১) সাদা কাগজ
(২) পেনসিল, রাবার
(৩) ত্রিকোণী (সেট ও মিটার স্কেল)
(৪) শক্ত খুঁটি বা কাঠি
(৫) মাপার ফিতা, রশি বা সূতলী
(৬) ফল গাছ রোপনের জন্য চিহ্নিত স্থানে স্থাপনের জন্য চিকন কাঠি ।
কাজের ধাপ
(১) জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের মাপ নিতে হবে ।
(২) এরপর কাগজে জমির নকশা মোতাবেক মাপ লিপিবদ্ধ করতে হবে ।
(৩) কাগজে জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মোতাবেক লাইন টানতে হবে। এভাবে দুই দিকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ লাইন টানলে একটি আরেকটির উপর লম্ব তৈরি হবে। এভাবে জমির নকশা অনুযায়ী কাগজে জমির চারদিকের বাউন্ডারী বা সীমানা লাইন টানতে হবে।
(৪) এরপর বাউন্ডারী রেখা জমির ভিতর দিকে সারি হতে সারির দূরত্বের অর্ধেক দূরত্ব বাদ দিয়ে গাছ লাগানোর রেখা (মূল রেখা ও মুক্ত রেখা টানতে হবে ।
(৫) এভাবে মুলরেখা টানার পর ঐ রেখার একপ্রান্ত হতে গাছ হতে গাছের যে দূরত্ব হবে তার দূরত্বের অর্ধেক দূরত্ব বাদ দিয়ে প্রথম গাছ লাগানোর চিহ্ন দিতে হবে। এরপর গাছ হতে গাছের যে দূরত্ব হবে তা পর পর চিহ্নিত করতে হবে
(৬) মূল রেখা টানার পর এর সমান্তরাল করে সারি হতে সারির দূরত্ব চিহ্নিত করে লাইন টানতে হবে ।
(৭) জমির কিনারা হতে মূলরেখা (সারি হতে সারির দূরত্বের অর্ধেক দূরত্ব বাদ দিয়ে) টানার পর ঐ সারিতে গাছ হতে গাছের দূরত্ব নিয়ম মোতাবেক চিহ্নিত করতে হবে । এ সকল চিহ্ন হতে লম্ব টানা হলে (মুক্ত রেখার অন্যান্য সমান্তরাল রেখার ওপর যেখানে অতিক্রম করবে সেখানে চিহ্ন দিতে হবে ।
(৮) মূল রেখার সমান্তরাল রেখার ওপর লম্বাভাবে অতিক্রম করা স্থানগুলো চিহ্নিত করে যাগে করলে এক একটি বর্গক্ষেত্র তৈরি হবে ।
(৯) এভাবে কাগজের নকশা অনুযায়ী জমির সীমনা হতে একদিকে গাছ লাগানোর জন্য সরল লাইন তৈরি করতে হবে । এই লাইনের সাথে অন্য লাইনের লম্ব তৈরির জন্য রশি নিয়ে ৩:৪:৫ অনুপাতে চিহ্নিত করতে হবে । এরপর দুইদিকে রশির লাইন প্রসারিতি করলে একটি ৯০° কোণ তৈরি হবে । এই প্রসারিত লাইন জমির শেষ পর্যন্ত নিতে হবে । এখন দুইদিকের প্রসারিত লাইনে (গাছ হতে গাছ এবং সারি হতে সারি) গাছ লাগানোর দূরত্বে প্যানটিং বোর্ড বা খুঁটি পুতে চারা রোপনের স্থানগুলো চিহ্নিত করা যাবে ।
(১০) রশির দুইদিকের লাইনের প্রতিটি চিহ্ন হতে পরস্পর লম্ব রেখা বরাবর রশি নিয়ে জমির অপর প্রান্ত পর্যন্ত যেতে হবে ।
(১১) এভাবে উভয়দিকের পরস্পর লাইনের উপর হতে নেয়া রশির সংযুক্তি স্থানগুলোতে কাঠি পুতে চিহ্নিত করতে হবে । এই চিহ্নিত স্থানগুলো গ্রাফ পেপারে অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের মত দেখাবে ।
(১২) এভাবে সারা জমিতে বর্গাকার পদ্ধতিতে মাঠে গাছ লাগানোরে স্থান চিহ্নিত করা যাবে ।
ক) বর্গাকার পদ্ধতিতে জমিতে গাছের সংখ্যা নির্ণয়
এ পদ্ধতিতে গাছ হতে গাছ এবং সারি হতে সারির দূরত্ব সমান থাকবে । কোন নির্দিষ্ট জমিতে গাছের সংখ্যা নির্ণয় পদ্ধতি (বর্গাকার বা আয়তকার পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর জন্য কেবল প্রযোজ্য): -
প্রতি হেক্টরে গাছের সংখ্যা = এক হেক্টর জমি (১০,০০০ বর্গ মিটার) । লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ।
উদাহরণ: আম গাছ রোপণের দূরত্ব ও সারি থেকে সারি ১০ মিটার এবং গাছ থেকে গাছ ১০ মিটার । তাহলে এক হেক্টরে কয়টি চারা লাগানো যাবে তা নির্ণয় কর।
আম গাছের সংখ্যা = ১০,০০০ বর্গ মিটার । ১০ মিটার ×১০ মিটার = ১০০ টি
অর্থাৎ বর্গাকার পদ্ধতিতে এ হেক্টর জমিতে প্রতি হেক্টর ১০০ টি আমের চারা লাগানো যাবে।
উদাহরণ: কাঁঠাল গাছ রোপনের দূরত্ব ও সারি হতে সারি ১৫ মি. এবং গাছ হতে গাছ ১৫ মিটার তাহলে এক হেক্টর জমিতে কয়টি কাঁঠাল গাছ লাগানোর যাবে নির্ণয় কর।
হেক্টর প্রতি গাছের সংখ্যা = ১০,০০০ বর্গ মিটার বা ১৫ মিটার×১৫ মিটার =88
অর্থাৎ বর্গাকার পদ্ধতিতে এক হেক্টর জমিতে ৪৪ টি (প্রায়) কাঁঠাল গাছ লাগানো যাবে ।
খ) আয়তক্ষেত্রে পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর নকসা ও গাছের সংখ্যা নির্ণয়:
এ পদ্ধতি বর্গাকার পদ্ধতির মতই। কেবল পাশাপাশি গাছ হতে গাছের দূরত্বের সাথে সারি বা সারির গাছের দূরত্বের প্রভেদ থাকবে । আয়তকার পদ্ধতিতেও একদিকের লাইনে গাছের দূরত্বের চিহ্ন এবং অপরদিকে সারির দূরত্বের চিহ্ন দিতে হয়। উভয় দিকের প্রসারিত লাইনের সংযুক্তি স্থানে কাঠি পুঁতে গাছ লাগানোর স্থান চিহ্নিত করা হয় ।
উদাহরণ: কাঁঠাল বাগানে গাছ রোপনের দূরত্ব সারি থেকে সারি ১০ মিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৮ মিটার । তাহান্সে এক হেক্টর জমিতে কয়টি চারা লাগানো যাবে তা নির্ণয় কর ।
প্রতি হেক্টর জমিতে গাছের সংখ্যা = এক হেক্টর (১০,০০০ বর্গ মিটার) । সারি থেকে সারির দূরত্ব গাছ থেকে । গাছের দূরত্ব = ১০,০০০ মিটার । ১০ মিটার ×৮ মিটার = ১২৫
অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে ১২৫ টি কাঁঠাল চারা লাগানো যাবে ।
গ) ত্রিভুজ পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর নকশা তৈরি ও গাছের সংখ্যা নির্ণয়
প্রাসঙ্গিক তথ্য: এ পদ্ধতিতেও মুক্ত রেখা ও মুক্ত রেখার সমান্তরাল রেখা এবং মুক্ত রেখার উপর লম্ব রেখা টানতে হবে । (বর্গাকার পদ্ধতির অনুরূপ)
উপকরণ
কাজের ধাপ
(১) প্রথমে বর্গাকার পদ্ধতির ন্যায় ১ থেকে ৫নং পর্যন্ত একই কাজ করতে হবে।
(২) উভয় দিকের লাইন টেনে মুক্ত রেখায় গাছ হতে গাছের নির্ধারিত দূরত্বে (মাপ মোতাবেক) চিহ্ন দিতে হবে (প্রথম সারিতে বর্গাকার পদ্ধতির ন্যায় গাছ লাগানোর স্থানে চিহ্ন দিতে হবে)।
(৩) সারি সংখ্যা বেজোড় হলে প্রতিটি বেজোড় সারিতে অর্থাৎ মুক্ত রেখা বা প্রথম সারির ন্যায় বেজোড় সারিগুলোতে চিহ্ন দিতে হবে।
(৪) সারি সংখ্যা জোড় হলে প্রথম সারির দুই গাছের জন্য চিহ্নিত স্থানের মাঝ বরাবর প্রতিটি জোড় সারিতে মূল গাছের জন্য স্থান চিহ্নিত করতে হবে ।
(৫) প্রথম সারিতে দুটি চিহ্নিত স্থানের সাথে পরবর্তীতে জোড় সারিতে মাঝ বরাবর বা বর্গকার পদ্ধতির ন্যায় চিহ্নিত স্থান ধরে মাঝখানে যাগে হবে। এতে ৩টি গাছ মিলে একটি ত্রিভুজ সৃষ্টি করবে। তবে জোড় সারির এক প্রান্ত হতে গাছের জন্য প্রথম চিহ্নিত স্থানটি গাছ হতে গাছের দূরত্বের পূর্ণ দূরত্বে চিহ্ন হবে ।
(৬) নকশা অনুযায়ী বর্গাকার পদ্ধতির ন্যায় জমিতে সীমানা ও গাছ লাগানোর লাইন তৈরি করতে হবে। প্রথম সারির এক প্রাতে গাছ হতে গাছের রোপিত দূরত্বের অর্ধেক বাদ দিয়ে প্রথম চিহ্ন দিতে হবে। একই নিয়মে বেজোড় সারিতে চিহ্নিত করতে হবে। এতে সমস্ত বেজোড় সারিগুলোতে প্রথম সারির সাথে সমান্তরাল (লম্বভাবে টানা রেখার) সারিতে একই লাইন চিহ্নিত হবে । আর জোড় সারিগুলোতে প্রথম সারির দুগাছের মাঝ বরাবর চিহ্নিত হবে। জোড় সারিগুলো একাত্তর সারি হিসেবে গণ্য হবে এবং এতে একটি করে গাছ কম হবে।
গাছের সংখ্যা নির্ণয়
ত্রিভুজ পদ্ধতিতে জমিতে গাছের সংখ্যা নির্ণয় = (প্রথম সারিতে গাছের সংখ্যা মোট সারির সংখ্যা)- একান্তর ক্রমিক সারির সংখ্যা ।
উদাহরণ: কোন জমির দৈর্ঘ্য ২০ মিটার এবং প্রস্থ ১৫মিটার। যদি ঐ জমিতে ৪ মিটার দূরে দূরে লাইন এবং ৩ মিটার দূরে দূরে গাছ লাগানো হয় তবে ঐ জমিতে মোট কতটি গাছ লাগানো যাবে ।
মোট লাইন সংখ্যা = জমির দৈর্ঘ্য: লাইনের দূরত্ব = ২০ মিটার ৪ মিটার = ৫টি। প্রথম লাইনে গাছের সংখ্যা = জমির প্রস্থ : গাছের দূরত্ব = ১৫ মি: ৩ মিঃ = ৫টি সুতরাং গাছের সংখ্যা = (৫×৫) - ( ৫-১-২) = ২৫-২ = ২৩টি অর্থাৎ মোট ২৩টি গাছ লাগানো যাবে ।
উদাহরণ: কোন নির্দিষ্ট জমিতে ১২মিটার দৈর্ঘ্যের ৭টি লাইন করা গেলে এবং প্রতিটি লাইনে ৪ মিটার দূরত্বে গাছ । লাগানো হলে ঐ জমিতে মোট কতটি গাছ লাগানো যাবে ।
গাছের সংখ্যা = (১২৪×৭) - (৭-১২) একান্তর ক্রমিক সারির সংখ্যা
= মোট সারির সংখ্যা-১:২
= (৩×৭)-৩=২১-৩= ১৮টি
অর্থাৎ মোট ১৮টি গাছ লাগানো যাবে ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
গাছের ফল ধারণের উপযুক্ত বয়স হয়েছে কিনা এবং গাছের পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি আছে কি না তা জানতে হবে। এমনকি গাছে পাকামাকড়ের আক্রমণ আছে কি না তাও জানতে হবে। এমনিভাবে মাটিতে রসের ঘাটতি, পরাগায়নের সমস্যা, তাপমাত্রা ইত্যাদি বিষয়ের তথ্য সগ্রহ করতে হবে ।
উপকরণ
(১) বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ ।
(২) বিভিন্ন ধরনের তথ্য (গাছের বয়স, মাটিতে রসের অবস্থা, পরাগায়ণের সুযোগ, তাপমাত্রা, মাটিতে পুষ্টি উপাদান ইত্যাদি)
(৩) প্রুনিং করাত, দা, প্রুনিং কঁচি বা সিকেচার
(৪) কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক
(৫) হরমোন
(৬) ঔষধ প্রয়োগের জন্য সিঞ্চনযত্র ইত্যাদি ।
কাজের ধাপ
(১) অফলবতী হওয়ার অভ্যন্তররীণ ও বাহ্যিক কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে ।
(২) ফুলের মধ্যে অসংগতি আছে কিনা তা দেখতে হবে। যেমন পুংকেশর বড়, গর্ভদন্ড খুব ছোট, আবার গর্ভদন্ড বড়, পুংকেশর ছোট, ফুল একলিঙ্গ, পুংকেশর আগেই বের হয়ে পূর্ণতা লাভ করে, পুংকেশরে পরাগরেণু খুব কম ইত্যাদি ।
(৩) ফুল ও ফল হওয়ার সময় বাধা সৃষ্টি করে এমন বাহ্যিক কারণগুলো দেখতে হবে । যেমন-শুষ্ক আবহাওয়া, প্রচন্ড তাপ, বাতাসের ঝড়ো গতি, গাছের অবস্থান খুব উঁচুতে বা নিচুতে, গাছের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, গাছে অতিরিক্ত ডালপালা গজানো, কীট ও রোগের আক্রমণ, অসময়ে এবং মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রে করা, ফুল হওয়ার পর বৃষ্টিপাত হওয়া ইত্যাদি ।
(৪) ফুল আসার আগে গাছের স্বাভাবিক বৃদি বজায় রাখার জন্য উপযুক্ত মাত্রায় সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে । সার প্রয়োগের পর সেচ দিতে হবে।
(৫) বংশগত কারণে অফলবতী হলে সে গাছ বাদ দিয়ে স্থায়ীভাবে অধিক ফলনশীল ভালজাতের গাছ লাগাতে হবে।
(৬) পরাগায়ণের সুবিধার জন্য মৌমাছি পালন ও হাতের সাহায্য পরাগায়ণ করতে হবে ।
(৭) উপরে ২নং ক্রমিকের বর্ণিত সমস্যা সমাধানের জন্য বিপরীত লিঙ্গের ও অনেকগুলো গাছ একত্রে লাগানো যেতে পারে।
(৮) গাছের দৈহিক বৃদ্ধি বেশি হলে জমি চাষ করে যা অন্য উপায়ে মূল ছাটাই করতে হবে। গাছের প্রধান শাখা বা কাণ্ডের গোড়ায় রিং আকারে বাকল কাটতে হবে। এই বাকল গাছ বিশেষে ১০ সে: মি: থেকে ১২ সেঃ মিঃ এর বেশি ব্যাসবিশিষ্ট কাটা যাবে না ।
(৯) গাছে ফলের সংখ্যা খুব বেশি হলে ফল পাতলা করে দিতে হবে ।
(১০) চিরসবুজ গাছের বেলায় ফল পাড়ার পর ছোট ছোট ও রোগাক্রান্ত শাখা প্রশাখা ছাটাই করে দিতে হবে । এছাড়াও কোন কোন বিশেষ শাখা বৃদ্ধির জন্য অন্য শাখা প্রশাখা কেটে দিতে হবে। লিচু, পেয়ারা, কুল, জাম, জামরুল, কাঁঠাল ইত্যাদি ফল গাছে প্রজাতি ভেদে ভাল ফলনের জন্য কম বা বেশি অঙ্গ ছাঁটাই করতে হবে।
(১১) পানো ফিকস প্যাটেন্ট হরমোন, ২-৪ ডি হরমোন সাধারণত প্রতি দশলক্ষ ভাগ পানিতে ১ থেকে ২০০ ভাগ হরমোন মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
ফল বাগানের যথোপযুক্ত যত্নের উপর গাছের ফল ধরা, ফলের আকার বড় হওয়া ইত্যাদি বিষয় অনেকাংশে নির্ভর করে। আবার ফলের সংগ্রহ পদ্ধতির ওপর ফলের গুণাগুণ ও ফল সংরক্ষণ সময়কাল নির্ভর করে। সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে ফল সংগ্রহ করা না হলে ফলের বিক্রয়মূল্য কমে যায় এবং ফল বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায় না ।
ফল সংগ্রহ:
ফল পাকা অবস্থা পর্যন্ত গাছে রেখে সংগ্রহ করলে ফল সর্বোৎকৃষ্ট অবস্থায় পৌঁছে। এতে রং ও আকৃতি ভাল হয় এবং স্বাদ পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করা যায়। তবে ফল কীভাবে ব্যবহার করা হবে, কতদূরে পাঠানো হবে, কতদিন রাখা হবে, রোগ, পোকামাকড়ের আক্রমণ, নিরাপত্তা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ফল সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করতে হয় । গাছের আকার, ফলের বোটা শক্ত বা নরম, বাজারের চাহিদা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ফল সংগ্রহের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ।
ফল সংগ্রহ পদ্ধতি: সতেজ ফল সাধারণত দু'ভাবে ভালো হয় । তবে অনেক সময় সাধারণ পদ্ধতি (নিচের ক ও খ) অপেক্ষা অন্য পদ্ধতিতেও ফল সংগ্রহ করা যায় । যথা
(ক) হাত দিয়ে তোলা/পাড়া
(খ) মেশিনের সাহায্যে তোলা / পাড়া
(গ) পশুর সাহায্যে তোলা / পাড়া
ফল সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
১. ঝুড়ি (বাঁশের বা কাঠের)
২. চাকু, কাঁচি,
৩. সাকশন ক্যাপ
৪. লম্বা বা ছোট হাতাওয়ালা লাঠির মাথায় বাঁধা থলে,
৫. মই (সাধারণ বা ফোল্ডার)
৬. চটের বা রশির জালির দোলনা,
৭. পলিথিন, ক্যানভাস বা চটের ব্যাগ
৮. রশি বা দড়ি
ফল ব্যবহারের উদ্দেশের ওপর নির্ভর করে ফল সংগ্রহ পদ্ধতি অনুশীলন করা হয় । যেমন-পাকা খাওয়া, জুস তৈরি, আচার বা চাটনি তৈরি, তরকারি খাওয়া বিদেশে রপ্তানি ইত্যাদি ।
ফল সংগ্রহের জন্য ফলের বাগানে বা গাছের নিকট যেতে হবে । তারপর গাছের ফল পাড়ার উপযুক্ত হয়েছে কি না তা দেখতে হবে । ফল পরিপুষ্ট হলে ফল গাছের উচ্চতা বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কিভাবে ফল সংগ্রহ করা যাবে ।
আম সংগ্রহঃ
(১) আম হাত দিয়ে বা লম্বা লাঠির মাথায় জালি/এলে বেঁধে পাড়তে হবে ।
(২) একজনে গাছ হতে আমের বোঁটা ছিড়ে দেবে। আর একজন নিচে বস্তা/খলে ধরে আমটিকে সরাসরি । মাটিতে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে মাটিতে গড়ায়ে দিবে।
(৩) গাছে উঠে চটের থলেতে আম ছিড়ে ভর্তি করে রশির সাহায্যে খলে ঝুলিয়ে নিচে নামিয়ে দিতে হবে।
(৪) গাছের পাশে মই দিয়ে দাঁড়ায়ে বা গাছে উঠে লম্বা লাঠির মাধার ছুরি বা কঁচি বাঁধা লাঠি দিয়ে বোটা কেটে দিতে হবে । আর ঠিক তার নিচে মশারি টানানারে মত রশির আলি রাখলে তাতে আম পড়বে এবং আঘাত কম পাবে।
পেঁপে সংগ্রহঃ
(১) গাছ ছোট হলে হাতের নাগালের মধ্যে থাকা অবস্থায় হাতে হ্যান্ড গোব পরে ফল পাড়তে হবে ।
(২) পাছ লম্বা হলে মই দিয়ে উপরে উঠে বা লম্বা হাতাওয়ালা সাকসান কাপ-এর সাহায্যে পাড়তে হবে ।
(৩) পেঁপে পাড়ার সময় যাতে ঘষা না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে ।
কলা সংগ্ৰহঃ
(১) কলা পরিপুষ্ট হলে কলার কাঁদি একমুখ খোলা পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে ।
(২) কলার কাদির মাথার দিক হতে পলিব্যাগ পরায়ে দিয়ে খোলামুখ কাদির গোড়ার দিকে বেঁধে দিতে হবে ।
(৩) এর পর কলার কাঁদি কাটার সময় গাছের নিকট দুজন যেতে হবে। একজন কঁদি কেটে দিবে এবং আর একজন নিচে দাঁড়ায়ে কাঁদি ধরবে ।
(৪) গাছ বড় হলে কলার কাদির নিচে হুক আকারে বাধা বাঁশ দিয়ে ঠেকা দিতে হবে। তারপর কঁদি যে দিক ঝুলে আছে তার বিপরীত দিকে গাছের কাণ্ডে মাটি হতে ১০০ থেকে ১৫০ সে.মি. উপরে গাছের ব্যাসের ৩ ভাগের ২ ভাগ পরিমাণ স্থান অর্ধবৃত্তাকারে কেটে দিতে হবে । এখন ঠেকা দেয়া বাঁশের গোড়া আস্তে আস্তে দূরে সরানো হলে কাদি নিচে নেমে আসবে । এভাবে কঁদি নাগালের মধ্যে এলে তা ধরে নামানো যাবে ।
কাঁঠাল সংগ্ৰহ
(১) গাছে উঠে বা নিচে থেকে ফলের বোটা গাছের কাণ্ড থেকে সামান্য রেখে কেটে নিতে হবে। ফল ছোট হলে এক হাতে বোঁটা ধরে অন্য হাতে চাকু বা কঁচি দিয়ে বোটা কাটা যাবে ।
(২) কাঁঠাল বড় হলে এবং উঁচুতে হলে বোটার সাথে রশি বেঁধে গাছের কাণ্ডে রশি পেঁচ দিয়ে ফলের ঝুলন্ত ভারের সমতা আনতে হবে । তারপর রশির একমাথা ধরে ফলের বোটা কেটে দিতে হবে। এরপর রশি আস্তে আস্তে ঢিলা দিলে কাঁঠাল নিচে নেমে যাবে।
(৩) ফল পাকা অবস্থা হলে থলের মধ্যে কাঁঠাল ভর্তি করে থলের মুখে রশি বেঁধে ২নং ক্রমিকে বর্ণিত নিয়মে ফল পাড়তে হবে ।
আনারস সংগ্রহ
(১) ছোট বাগান হলে ফলের বোটার নিচে কাণ্ড কেটে ঝুড়িতে সাজিয়ে আনা হয় ।
(২) বড় বাগান বা পাহাড়ি এলাকার বাগান হলে ফল তুলে বেল্টের ঝুড়িতে সাজানো হয় । যান্ত্রিক উপায়ে বা হাতের সাহায্যে বেল্ট ঘুরায়ে দূরে নির্দিষ্ট স্থানে পাঠানো হয়
লিচু সংগ্ৰহ
(১) লাঠির মাথায় তুকসহ বাঁধা থলিতে লিচুর গাছো ঢুকায়ে টান দিলে কিছুটা কাণ্ডসহ ভেঙ্গে আসবে ।
(২) হাতের নাগালের মধ্যে হলে লিচুর গাছোসহ ধরে মাচেড় দিলে কিছুটা কাণ্ড সহ ভেঙ্গে আসবে ।
(৩) লম্বা লাঠির মাথায় আংটার মত করে লাহোর বা কাঠের টুকরা বেঁধে লিচুর গাছোসহ ডালে বাধায়ে টান দিলে ডালসহ ভেঙে আসবে । এ সময় আংটায় বাধানো ভাঙা ডালসহ লিচুর গাছো কাছাকাছি এনে ঝুড়িতে রাখতে হবে ।
নারিকেল সংগ্রহ
(১) নারিকেল ঝুনা হলে গাছে উঠে ছড়ার সাথে রশির একমাথা শক্ত করে বঁধতে হবে। রশির অপর মাথা গাছের মাথার সাথে পেঁচ দিয়ে ধরতে হবে। তারপর কাদি কেটে দিয়ে আস্তে আস্তে রশি ঢিলা করা হলে নিচে নেমে আসবে।
(২) নারিকেলের ছড়ার ভেতর দিয়ে প্যাঁচ দিয়ে রশির একমাথা গাছের মাথায় অর্থাৎ নারিকেলের ছড়ার উঁচুতে বঁধতে হবে । এরপর রশির অপর মাথা কমপক্ষে ৪৫ ডিগ্রী কোণ করে নিচে দূরে কোন খুঁটির সাথে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে । এরপর ছড়ার গোড়া কেটে দিলে রশি বরাবর ছড়া পড়ায়ে নিচে চলে আসবে।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
ফল কি উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা হবে তার ওপর নির্ভর করে ফল বাছাই করা হয়। আবার, চাটনি, জ্যাম, জেলি তৈরি করা হলে ফল ছোট বড় বাছাই করার প্রয়োজন হয় না। প্যাকিং করে দূরে পাঠানোর জন্য বড় এবং ছোট ফল একসাথে প্যাকিং করা হলে বড় ফলের চাপে ছোট ফল নষ্ট হতে পারে। তাই বড় এবং ছোট ফল বাছাই করে আলাদা আলাদা করতে হয়।
উপকরণ
(১) ফল বাছাই টেবিল
(২) ফল গ্রেডিং করার জন্য প্রেডিং বিন
(৩) ফল রাখার ঝুড়ি বা বাক্স বা ট্রে
(৪) প্যাকিং কাগজ, হ্যাভগোব, পরিষ্কার ভাজা পাতা, খড় ইত্যাদি
(৫) ফ্যান, ঠান্ডা ঘর বা খোলামেলা ছায়াযুক্ত স্থান
কাজের ধাপ
(১) ফল সংগ্রহ করার পর কাটা, ফাটা বা থেতলানোগুলো আলাদা করতে হবে।
(২) রোগ ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত ফলগুলো আলাদা করতে হবে ।
(৩) ছোট, মাঝারি ও বড় ফলগুলো আলাদা আলাদা করতে হবে। (এ কাজ হাতের সাহায্যে বা থ্রেডিং বিনের সাহায্যে করা যায়)।
(৪) কাঁচা ও পরিপক্ব ফল আলাদা করতে হবে।
দ্রুত পচনরোধে ব্যবহার্য প্রযুক্তি
(১) গ্রীষ্ণমন্ডলীয় ফুল প্রায় ১০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গুদামে কিছুদিন রাখা
(২) হিমায়িত গাড়িতে পরিবহন করা
(৩) নিয়ন্ত্রিত গুদামে বাইরের বাতাস ঢুকানো
(৪) গুদাম ঘরে কার্বনডাই অক্সাইডের মাত্রা বেশি হলে প্রতিটন ফলের জন্য ১৪ থেকে ১৫ কেজি চুন (লাইম) গুদামে রাখতে হবে ।
(৫) কলার মত ফল পলিথিন ব্যাগে ভর্তি করে বাইরে পাঠানো যায়।
(৬) গুদামে বা প্যাকিং বাক্সে ১ থেকে ৫% অক্সিজেন ও কার্বনডাই অক্সাইড ব্যবহার করা হলে ফল পচনকারী জীবাণুর বংশ বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ।
(৭) ফলের পঁচন রোধের জন্য ফলের গায়ে মোমের আবরণ দেয়া হয় ।
(৮) ফলের পঁচন রোধে ফলের গায়ে সরিষার তেল দ্বারা প্রলেপ দেয়া হয় ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
দেশের ভেতরে বা বাইরে তাজা অবস্থায় ফল প্রেরণ করার মৌলিক কাজগুলো একই ধরনের। যেমন
(ক) স্থানীয় বা আঞ্চলিক বাজারের বা দেশের বাইরের চাহিদা মোতাবেক গাছ থেকে ফল তালোর বয়স নির্ধারণ
(খ) গাছ থেকে ফল তালোর পর মাঠে ছায়াযুক্ত ঠান্ডা স্থানে ফল জড়ো করা
(গ) বৃষ্টি বা খারাপ আবহাওয়ার সময় ফল না পাড়া
(ঘ) ফল সংগ্রহ করে রোদ ছড়ায়ে না রাখা
(ঙ) সমতল স্থানে মাদুর বা তাজা পাতা বিছায়ে গদির মত করে তার উপর ফল রাখা
(চ) ফল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা ।
(ছ) কাটা, ফাটা, রোগ ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত ফল আলাদা করা
(জ) ছোট, মাঝারী ও বড় ফল আলাদা করে পৃথক পৃথক ঝুড়িতে বা প্যাকেটে প্যাকিং করা
(ঝ) মাঠ হতে নির্দিষ্ট স্থানে (বাজার, আড়ৎ, স্টেশন, ট্রাক স্ট্যান্ড, ঘাট, বিমান বন্দর) পরিবহন করা ।
কাজের ধাপ
বাজারজাতকরণের পূর্বে স্থানের দূরত্ব, বাজারে ক্রেতার ধরন ও চাহিদার উপর নির্ভর করে ফলের গ্রেডিং ও প্যাকিং করতে হয় । গ্রেডিং ও প্যাকিং-এর উপর ফলের গুণগত মান অনেকাংশে নির্ভরশীল ।
বাজারজাতকরণের জন্য প্যাকিং
(১) নিরাপদ প্যাকিং করার জন্য ফল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে ।
(২) ফলের গ্রেড অনুসারে পৃথক পৃথক প্যাকেটে ফল সাজাতে হবে,
(৩) ফল একের অধিক স্তরে সাজাতে হলে উভয় স্তরের মাঝে নরম গদির মত করে পাতা, কাগজ বা খড় কুটা দিতে হবে ।
(৪) পরিবহন প্যাকেট বায়ুরোধী না হলে আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
(৫) দ্রুত পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে ।
(৬) হিমায়িত গাড়িতে পরিবহন করা হলে ফল অনেকটা নিরাপদ থাকবে ।
বাজার তথ্য সংগ্রহ
১) বেশি করে ফল উৎপাদন পরিকল্পনা থাকলে বাজারের পণ্য সরবরাহ ও চাহিদার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এ ব্যাপারে বাজার কমিটির সাথে যোগাযোগ করতে হবে ।
(২) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বা পরিসংখ্যান বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে অঞ্চল বিশেষে ফল উৎপাদনের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
(৩) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণয়নকৃত হাটবাজারের ট্যারিফ সার্ভে তথ্য নেয়া যেতে পারে,
(৪) স্থানীয় উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের জন্য আড়ৎ বা গুদামসমূহের হিসেব বিপণন বিভাগের নিকট হতে নিতে হবে।
(৫) ফড়িয়া বা দালালদের নিকট হতে ফল উৎপাদন ও বিক্রয় বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে । কেননা তারা স্থানীয়ভাবে ঘুরে ঘুরে পণ্য ক্রয় করে ও আড়তে পাঠায়। তারা যদি ব্যাংক হতে বা ধনী ব্যবসায়িদের নিকট হতে অগ্রীম টাকা পায় তাহলে ক্রয়ের ও বিক্রয়ের আগ্রহ এক ধরনের হবে। আবার নিজ পুঁজিতে ক্রয় ও বিক্রয় করে থাকলে আগ্রহ অন্য ধরনের হবে । যা বাজার দরের ওপর প্রভাব ফেলে ।
বাজার তথ্য বিশ্লেষণ
(১) ফল উৎপাদান ও চাহিদার পরিমাণ এবং বিক্রয় স্থানগুলোর অবস্থান এবং সুবিধা-অসুবিধা
(২) ফল পরিবহণ সুবিধা এবং প্রেরণকৃত স্থানসমূহের চাহিদা জানতে হবে, জানতে হবে ।
(৩) বিভিন্ন ফল একইসাথে একই বাজারে বাজারজাতকরণ না করে বিভিন্নমুখী পরিকল্পনা করতে হবে
(৪) উৎপাদান বেশি হলে বা বাজারে সরবরাহ বেশি হলে অতিরিক্ত ফল সংরক্ষণ করার সুবিধা আছে কিনা তা জানতে হবে,
(৫) ফল উৎপাদন অঞ্চলে উৎপাদিত ফলের জাতগুলোর তথ্য জানতে হবে। কেননা একই জাতের ফল বেশি লাগানো হলে সেগুলো একই সাথে উৎপাদিত হবে এবং একই সাথে বাজারে আসবে। যা বাজারমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলবে।
ন্যায্য মূল্য বা উচ্চ মূল্য নিশ্চিতকরণ
(১) বাজারের চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।
(২) বিভিন্ন ধরনের ফলের উৎপাদন এলাকা চিহ্নিত করতে হবে। তারপর এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সময়ে উৎপন্ন হয় এমন ধরনের ফলের জাত নির্বাচন করতে হবে। উৎপাদন কারিদের নিয়ন্ত্রিতভাবে (সময় ও পরিমাণ উৎপাদন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে ।
(৩) উৎপাদকগণ এক সাথে যাতে বাজারে ফল না আনে সেজন্য প্রচার ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে
(৪) স্থানীয়ভাবে বা কেন্দ্রিয়ভাবে এলাকা ভিত্তিক ফল উৎপাদনের সঠিক তথ্য থাকতে হবে । যাতে বাজারে পণ্য সরবরাহের কর্মসূচি প্রণয়ন করা সম্ভব হয় । সব এলাকায় যেহেতু সব ধরনের ফল উৎপন্ন একই সময়ে হয় না । সেহেতু উৎপাদন এলাকা হতে যেখানে চাহিদা আছে সেখানে সরবরাহের পরিমাণ নিরূপণ করে দেয়া যায় । এছাড়া পণ্য চলাচলের কর্মসূচি তৈরি করা যায় ।
(৫) অতিরিক্ত পণ্য উৎপন্ন হলে বা বাজারে সরবরাহ বেশি হলে হিমায়িত গুদামে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে । বাজারে সরবরাহ কমে গেলে তখন হিমাগার হতে সরবরাহ করতে হবে ।
(৬) প্রতি এলাকার জন্য সমবায় বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
(৭) প্রতিটি পণ্যের স্বীকৃত উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ করে ন্যূনতম বিক্রয় মূল্য ধার্য করতে হবে । যাতে বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেলেও উৎপাদনকারী সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় ।
(৮) উৎপাদনকারীগণ পণ্য বিক্রয় না করে সমবায় বাজারে সরবরাহ দিয়ে গেলে সমবায় বাজার সে পণ্য বিক্রয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে। তাতে কৃষকদের হয়রানি বন্ধ হতে পারে ।
(৯) সমবায় বাজার উৎপাদক কর্তৃক সরবরাহকৃত ফল পরিষ্কার, গ্রেডিং ও প্যাকিং করে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে ।
(১০) কৃষকদের ফল উৎপাদনে আগ্রহ বজায় রাখার জন্য উৎপাদন ও সরবরাহ বেশি হলে সে সময়ে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা যেতে পারে ।
একটি গাছ থেকে অনুরূপ গাছের জন্ম লাভই গাছের বংশ বিস্তার অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছ যৌন কোষের সাহায্য নিয়ে বা সাহায্য ব্যতিরেকে স্বতন্ত্র গাছ উৎপন্ন করে তাকে বংশ বিস্তার বলে । ফলে বংশ বিস্তার দু'ভাবে হয়ে থাকে--যৌন পদ্ধতিতে ও অযৌন বা অঙ্গজ পদ্ধতিতে। যৌন বংশ বিস্তার হলো ফুলের পুংকেশরের পরাগরেণুর সাথে ডিম্বাশয়ের ডিম্বানুর যৌন উপায়ে মিলনের ফলে উৎপাদিত বীজ থেকে চারা উৎপাদন পদ্ধতি । যৌন পদ্ধতিতে বংশবিস্তারের সাধারণ কারণগুলো হচ্ছে (ক) বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চারা উৎপাদন (খ) নতুন জাত উদ্ভাবন (গ) কলম করার জন্য স্টক গাছ তৈরি । কিছু কিছু গাছপালা আছে যেগুলো বীজ ছাড়া অন্য পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করা যায় না, যেমন-তাল, নারিকেল, সুপারি। যৌন পদ্ধতিতে উৎপন্ন গাছ কষ্ট সহিষ্ণু হয় ও অনেক দিন বেঁচে থাকে কিন্তু এ পদ্ধতি থেকে উৎপাদিত গাছের ফলে মাতৃগুণ বজায় থাকেনা দেরিতে ফুল ও ফল ধরে । যৌন কোষ ছাড়া মাতৃগাছের অনুরূপ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নতুন গাছের জন্ম হয় তাকে অযৌন পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার বলে। অযৌন বংশ বিস্তার বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে, কর্তন বা ছেদ কলমের মাধ্যমে দাবা, জোড় ও চোখ কলমের মাধ্যমে করা যায়। অযৌন বংশ বিস্তারের সুবিধা হচ্ছে মাতৃ গাছের অনুরূপ গুণাগুণ সম্পন্ন গাছ উৎপাদন করা যায় ও খুব তাড়াতড়ি ফল পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে নতুন কোন জাত উদ্ভাবন করা যায় না।
যৌন বংশ বিস্তার পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
বীজের সাহায্যে যে বংশ বিস্তার সাধিত হয় তাকে যৌন বংশ বিস্তার বলা হয়। যেমন নারিকেল, সুপারি, পেঁপে, আমড়া, তরমুজ, ফুটি, আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল ইত্যাদি ফলের বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা হয়ে থাকে ।
যৌন পদ্ধতিতে ফলের বংশ বিস্তারে দুটি ধারায় বা ব্যবস্থায় চারা উৎপাদন করা হয়ে থাকে- ক) বীজতলা তৈরি করে বীজ সরাসরি বপনের মাধ্যমে চারা উৎপাদন খ) পলি ব্যাগে চারা উৎপাদন ।
ক) বীজ তলায় চারা উৎপাদন পদ্ধতি অনুশীলন প্রয়োগ
জনীয় উপকরণ
১। বীজ (বিভিন্ন ফলের) ২। বীজ পাত্র ৩। খড়কুটা ৪। খুঁটি ৫। রশি ৬। চাটাই ৭ । ঝাঝরি ৮ । খুরপি ৯। বাঁশের কাঠি ১০। পানি ১১। সার (জৈব রাসায়নিক) ১২। মাপার টেপ ১৩। কোদাল
কাজের ধাপ
সতর্কতা
খ) পলিব্যাগে ফলের চারা উৎপাদন পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
পলিব্যাগে চারা উৎপাদন একটি আধুনিক প্রযুক্তি বা তুলনামূলকভাবে সহজ ও সুবিধাজনক এতে চারার যত্ন ভালোভাবে নেয়া যায় । তাছাড়া চারা সহজে মরে না, চারা পরিবহণ এবং রোপণ করাও বেশ সহজ।
১। প্রয়োজনীয় উপকরণ
২। কাজের ধাপ
সতর্কতা
অযৌন পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
গাছের প্রতিটি কোষই নতুন গাছ সৃষ্টির কৌলতাত্ত্বিক উপাদান সমূহ ধারন করে । এজন্য একটি একক কোষ থেকেই নতুন একটি গাছের জন্ম হতে পারে । যৌন কোষ ছাড়া মাতৃগাছের অন্যান্য কোষ যেমন-কুঁড়ি, পাতা, ডাল, শিকড়, বাকল ইত্যাদি থেকে যে প্রক্রিয়ায় মাতৃগাছের অনুরূপ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন নতুন গাছের জন্ম হয় তাকে অযৌন পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার বলে। অযৌন বংশ বিস্তার বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে, কর্তন বা ছেদ কলমের মাধ্যমে, দাবা, জোড় ও চোখ কলমের মাধ্যমে করা যায় ।
শাখা কলাম ও গুটি কলম পদ্ধতি অনুশীলন
শাখা কলম পদ্ধতি অনুশীলন
১। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ
২। কাজের ধাপ
সতর্কতা
গুটি কলম পদ্ধতি অনুশীলন
১। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ
২। কাজের ধাপ
৩। সতর্কতা
শাখা কলম পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
শাখা প্রশাখার উপযুক্ত অংশ সমূহ মাতৃগাছ থেকে কেটে আলাদা করে অনুকূল পরিবেশে রেখে ও উপযুক্ত যত্ন নিয়ে তা থেকে মূল পলব গজিয়ে নতুন চারা গাছ তৈরি করাই হলো শাখা কলম । শাখা কলাম চার প্রকার যথা-শক্ত কাঠ শাখা কলম, আধাশক্ত কাঠ কলম, কচি /কোমল শাখা কলম/ও বীরৎ শাখা কলম ।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ
ক) উন্নত জাতের মাতৃগাছ
খ) সিকেচার
গ) আরোলা চাকু
ঘ) নার্সারি বেড
ঙ) খুরপী
চ) কোদাল
ছ) ছায়াযুক্ত স্থান
কাজের ধাপ
সাবধানতা
১। শাখা কলম রোপণের সময় অগ্রভাগ উপরে রেখে নিম্নাংশ মাটিতে পুতে দিতে হবে ।
২। নার্সারি বেড অর্থ ছায়াযুক্ত স্থানে হওয়া উচিত ।
৩। নার্সারি বেডের মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা আবশ্যক কিন্তু সুনিষ্কাশিত হওয়া উচিত।
সংস্পর্শ জোড় কলম পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
গাছের আদি জোড় ও উপজোড় পরস্পর সংযুক্ত হয়ে যখন একটি একক গাছ হিসাবে বৃদ্ধি লাভ করে তখন তাকে গ্রাট জোড় কলম বলে এবং এ জোড় লাগানোর প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় গ্রাফটিং বা জোড় কলম। জোড় কলম দু'ধরনের (ক) সংযুক্ত বা সংস্পর্শ জোড় কলম (খ) বিযুক্ত জোড় কলম। সংস্পর্শ জোড় কলম পদ্ধতিতে উপজোড়কে তার নিজস্ব মূলতন্ত্রের উপর বৃদ্ধিরত অবস্থায় আদি জোড় সংস্পর্শে এনে জোড়া লাগানো হয় ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি
কাজের ধাপ
সতর্কতা
ভিনিয়ার জোড় কলম পদ্ধতি অনুশীলন
১। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ
কাজের ধাপ
৩। সতর্কতা
প্রাসঙ্গিক তথ্য: বাডিং এমন এক প্রকার জোড় কলম যাতে শাখার পরিবর্তে পলবের কুঁড়ি বা চোখ (ফ) উপজোড় রূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শীতের শেষে বসতে যখন গাছ বেশ সক্রিয়, রসপূর্ণ ও বর্ধনশীল হয়ে উঠে সে সময় অর্থাৎ মার্চ এপ্রিল মাস এর জন্য খুবই উপযোগী। চোখ কলমের জন্য প্রায় এক বৎসর বয়ক আদি জোড় নেয়া উত্তম । চোখ কলম ছয় ধরনের- ১ টি চোখ কলম ২। আই-চোখ কলম ৩। তালি চোখ কলম ৪ । চক্র চোখ কলম ৫ । কুচি চোখ কলম । ৬। ফোরকাট বা জিহ্বা চোখ কলম ।
টি চোখ কলম (T-budding)
কুঁড়ি চোখ কলম বিভিন্ন পদ্ধতি সমূহের মধ্যে একটি অত্যন্ত সুপরিচিত ও জনপ্রিয় পদ্ধতি । এ পদ্ধতিতে উন্নত ডালের একটি মাত্র চোখ ব্যবহার করে নতুন গাছ উৎপন্ন করা হয় ।
উপকরণ ও যন্ত্রপাতি
১। আদি জোড় ও উপজোড়
২। বাডিং ছুরি
৩। দ্বিফলক বিশিষ্ট ছুরি
৪ । নাইলন স্ট্রিপ বা সুতলি
কাজের ধাপ
১। নির্বাচিত আদি জোড় মাটি থেকে ২০-২৫ সেমি উপরে কাণ্ডের ওপর আড়াআড়ি ভাবে ১.৩ সে.মি/ পরিমাণ লম্বা কর্তন দিতে হবে । এ কাটা দাগের মাঝখানে থেকে নিচের দিকে ৪-৫ সে.মি. পরিমাণ আরেকটি লম্বালম্বি কর্তন দিতে হবে ।
২। লম্বালম্বি দাগ বরাবর চাকু দ্বারা কাঠ থেকে বাকল আলগা করতে হবে ।
৩ । কাঙ্খিত মাতৃগাছ থেকে সুপ্ত কুঁড়িসহ একটি বাকল কেটে নিতে হবে । বাকলটিকে ঢালের মত করে তৈরি করে নিতে হবে ।
৪ । কুঁড়িসহ বাকলটি আদিজোড় কর্তিত অংশে ঢুকিয়ে দিতে হবে ।
৫। কুঁড়িটিকে বাইরে রেখে পলিথিন ফিতা দ্বারা বাকলটি আদি জোড়ের সাথে ভালোভাবে বেঁধে দিতে হবে ।
৬। সংযোজিত কুঁড়িটি ২০-৩০ দিনের মধ্যে নতুন পলব ছাড়তে শুরু করবে। তখন জংলী ডালপালা গুলো ধীরে ধীরে কেটে দিতে হবে।
সাবধানতা
১। বাধার সময় কুঁড়িটি যেন ঢাকা না পড়ে ।
২। প্রস্ফুটিত কুঁড়ি ব্যবহার করা যাবে না ।
অলি চোখ কলম অনুশীলন
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ
কাজের ধাপ
আদি জোড় নির্বাচিত করতে হবে এবং নির্বাচিত আদিজোড়ের যে কোন সুবিধাজনক স্থানে বর্গাকার বা আয়তকার বাকল তুলে ফেলতে হবে । কাঙ্খিত মাতৃ পাছ থেকে সুখ কুঁড়িসহ আদিজোর কর্তিত স্থানের অনুরূপ আকৃতির একটি বাকল তুলে এনে আদি জোড়ের কর্তিত স্থানে স্থাপন করতে হবে। কুঁড়িটি বাইরে রেখে পলিখিন কিভা বা নাইলন লিপি দ্বারা বাকলটিকে আদি জোড়ার সাথে ভালোভাবে বেঁধে দিতে হবে।
৩। সতর্কতা
ক) বাধার সময় কুঁড়িটি যেন ঢাকা না পড়ে খ) প্রস্ফুটিত কুঁড়ি ব্যবহার করা যাবে না ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
মাঠ ফসলের সাথে উদ্যান তাত্ত্বিক ফসলের মূল পার্থক্য হলো এই যে উদ্যানতাত্ত্বিক ফসলের ক্ষেত্রে ভালোভাবে চাষের পর জমিতে নির্দিষ্ট আকারের গর্ত খনন করার পর গর্তে সার প্রয়োগ করে গাছ লাগানো হয় ।
উপকরণ ও যন্ত্রপাতি
কাজের ধাপ
১। চাষের পর জমিতে নির্দিষ্ট দুরত্বে নির্দিষ্ট মাপের গর্ভ করতে হবে। গর্তের মাটি চারদিকে ছড়িয়ে রাখতে হবে।
২। গাছের আকৃতির উপর বিবেচনা করে পর্ভের গভীরতা নির্ণয় করতে হবে। তবে সাধারণত ছোট ধরনের গাছের বেলায় (ভালিম, পেঁপে) গতটি ৫০ সে.মি.×৫০ সে.মি.×৫০ সে:মি: মাঝারি (পেয়ারা, কুল) ধরনের গাছের জন্য ৭০ সে.মি.×৭০ সে:মি: ৭০ সে.মি. এবং বড় ধরনের (কাঁঠাল, তেতুল গাছের বেলায় ১ মি. ১ মি.×১ মি: করা যায় তবে মাটির অবস্থা বুঝে গর্ভের মাপ নির্ধারণ করতে হবে। বেলে দোঁয়াশ বা হালকা ধরনের মাটির জন্য পর্বের আকার কিছু ছোট হলেও চলে।
৩। গর্ত করার সময় মাটির উপরি ভাগের ২/৩ অংশ মাটি (ছবি 'ক' অংশ) একদিকে ফেলতে হবে । আবার নিচের ১/৩ অংশ মাটি অপর এক দিকে (ছবি 'খ' অংশ) রাখতে হবে । উপরের অংশের মাটি উর্বর বেশি । তাই এসব মাটিতে আলাদা ভাবে সার মেশানোর পর গর্ত ভরাট করার সময় উপরের অংশের মাটি নিচে এবং নিচের অংশের মাটি উপরে দিতে হয়।
৪। গাছের আকৃতির উপর নির্ভর করে প্রতি গর্তে ২০-৪০ কেজি পচা গোবর বা আবর্জনা পঁচা সার ও ২০০-৫০০ গ্রাম টিএসপি সার 'ক' অংশের উপরের মাটির সাথে ভালো করে মেশাতে হবে।
৫। সার- গোবর মিশ্রিত উপরের মাটি পুনরায় গর্তে ফেলতে হবে । কিছু কিছু মাটি গর্তে ফেলার পর পা দিয়ে চাপ দিতে হবে । যেন গাছে লাগানোর পর পানি পেয়ে মাটি বসে রোপিত গাছের ক্ষতি না হয় ।
৬। সার মেশানো মাটি দিয়ে গর্ত পূরণ করার এক সপ্তাহ পর গর্তে চারা লাগাতে হবে। চারা পট বা পলিথিন ব্যাগ থেকে সাবধানে বের করতে হবে ।
৭ । এখন চারার গোড়ার বলের পরিমাণ মাটি গর্ত হতে সরিয়ে রাখতে হবে । এরপর পলিথিন ব্যাগটি চাকু দ্বারা লম্বালম্বি ভাবে কেটে দিতে হবে। তবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যেন মাটির বলটি পলিথিন ব্যাগ কাটার সময় অথবা পট থেকে বের করার সময় ভেঙে না যায় ।
৮ । এমন চারাটি সোজা করে গর্তে বসাতে হবে । গর্তে বসানোর সময় দেখতে হবে যেন বেশি নিচে বা উপরে লাগানো না হয় । আগে যে পরিমাণ নিচে পুঁতা ছিল ঠিক তা বজায় রাখতে হবে ।গর্তে বসানোর পর গর্ত হতে সরিয়ে নেয়া মাটি দিয়ে বলটি ভালো করে চেপে দিতে হবে। চারা রোপণের পর তাতে ঝাঝরি দিয়ে পানি দিতে হবে ।
৯ । চারা লাগানোর পর উত্তর - পশ্চিম কোনা বরাবর গাছের সহায়ক খুঁটি দিয়ে হালকা ভাবে বেঁধে দিতে হবে । তা হলে বাতাসে হেলে গাছের ক্ষতি হবে।
১০। চারা লাগানোর পর নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। চারা লাগানোর প্রথম কয়েকদিন কেবল পাতায় পানি দিয়ে গাছকে সতেজ রাখতে হবে এবং কয়েক দিন হালকা ছায়া দিতে পারলে ভাল হয় । বাঁশের খাঁচা দিয়ে চারটি গরু ছাগলের আক্রমণ হতে রক্ষার বাবস্থা নিতে হবে ।
সতর্কতা
১। হালকা মাটিতে গর্ত খননের সময় সাবধানে খনন করতে হবে যাতে গর্তের পাড় ভেঙে না যায় ।
২ । গর্ত ভরাট করার সময় গর্তের ভেতরের মাটি যেন আলগা না থাকে ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য: গাছে ফল ধারণের পূর্বে একটি সবল ও সুন্দর কাঠামো তৈরির জন্য গাছে ছাটাই করা হয় । এ কাজটি প্রধান প্রধান কাণ্ডকে কেন্দ্র করে রা হয় বলে এ ধরনের ছাটাইকে ট্রেনিং বলা হয় । অর্থাৎ চারা বা গাছের বিশেষ উচ্চতায় প্রধান কান্ড কাটা বা ছাটাই করা হলো ট্রেনিং ।
ট্রেনিং করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। ট্রেনিংয়ের জন্য গাছের চারা বা ছোট গাছ ২। ছুরি ৩। কঁচি ৪ । সিকেচার ৫ । ডাল কাটার দা ৬ । বোর্দোপেস্ট বা ছত্রাকনাশক ৭। গরম মামে ৮। পলিথিন
ট্রেনিং পদ্ধতি
ফল গাছে সাধারণত ৩ পদ্ধতিতে ট্রেনিং করা হয় । যথা
ক) উচ্চ কেন্দ্র খ) নাতি উচ্চকেন্দ্র এবং গ) মুক্ত কেন্দ্ৰ
কাজের ধাপ
(ক) উচ্চ কেন্দ্ৰ
১। নার্সারিতে ১ থেকে দেড় বছরের চারা নির্বাচন করতে হবে
২। নির্বাচিত চারাটির উচ্চতা ১ মিটার হলে ভাল হয়
৩। চারাটির নিচের দিকে পাশে গজানো শাখাগুলো এমনভাবে কাটতে হবে, যেন কাটা চিহ্ন মাটির সাথে। লাভাবে থাকে ।
৪ । শাখার যেখানে কাটা হবে তা যেন প্রধান কাণ্ড হতে কমপক্ষে ২.৫ সেমি, দূরে হয়। অর্থাৎ কাটা ডালটির গোড়ার অংশ প্রধান কাপ্ত হতে প্রায় ২.৫ সেমি. লম্বা থাকবে ।
৫ । শাখার যেখানে কাটা হবে তা যেন পর্ব সন্ধি বা গিরার উপর না হয়
৬ । প্রধান কাণ্ডের সাথে পাশে গজানো বা সংযুক্ত শাখা চিকন হলে প্রুনিং চাকু এবং শাখা মোটা হলে সিকেটিয়ার বা প্রুনিং করাত দিয়ে কাটতে হবে
৭ । সংযুক্ত শাখা কেটে গাছের কাঠামো সুন্দর ও শক্ত করতে ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগে ।
৮। ট্রেনিং এর কাজটি পরিষ্কার ও রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে করতে হবে। খুব সকালে বা একেবারে বিকালে শাখা ছাটাই করা উচিত না ।
খ) নাতি উচ্চকেন্দ্র
১। এ পদ্ধতিতে কাজের জন্য নার্সারিতে ১ থেকে ২ বছরের চারা নির্বাচন করতে হবে
২ । চারাটির প্রধান কাণ্ড ১ মিটার উঁচু হওয়া পর্যন্ত পাশের শাখাগুলো কেটে দিতে হবে, তবে এ সময় প্রধান কাণ্ডের মাথা কাটা যাবে না ।
৩। এ সমস্ত শাখাগুলো বাড়ার সাথে সাথে প্রধান কাণ্ডটি ১.৫ থেকে ২ মিটার উঁচু হলে প্রধান কাণ্ডের মাথা কেটে দিতে হবে ।
৪ । প্রধান কাণ্ড ও পার্শ্ব শাখাগুলো কাটার পর পরই কাটাদ্যানে বোর্দোপেস্ট বা ছত্রানাশক লাগাতে হবে ।
গ) মুক্ত কেন্দ্ৰ
১। এ পদ্ধতিতে কাজের জন্য নার্সারিতে ১ বছরের চারা নির্বাচন করতে হবে
২। চারাটির প্রধান কাণ্ড ০.৫ থেকে ১ মিটার উঁচু হলে মাথা বা শীর্ষকুঁড়ি কেটে দিতে হবে
৩। এরপর পাশের শাখাগুলো বাড়তে দিতে হবে।
৪ । গাছ ঝোপালো করার প্রয়োজন হলে পাশের শাখাগুলো কিছুটা বড় হতে দিতে হবে। এরপর শাখাগুলোর মাথা কেটে দিতে হবে ।
৫ । তবে পাশে গজানো শাখা বেশি ঘন হলে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে কিছু কিছু শাখা কেটে দিতে হবে
৬। এ কাজ সম্পন্ন করে গাছের কাঠামো ঠিক করতে ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগে
৭ । প্রতিবারই শাখার বা কাণ্ডের কাটাস্থানে বোর্দোপেস্ট বা ছত্রাকনাশক লাগাতে হবে ।
প্রাসঙ্গিক তথ্য: প্রুনিং বলতে গাছের যে কোন অপ্রয়োজনীয় অংশ ছেটে ফেলা বা কেটে বাদ দেয়া বোঝায় । ছাটাই এর উদ্দেশ্য হলো গাছকে সুন্দর রূপ দেয়া, গাছের ডালপালা বেশি দৃঢ় করা, বেশি পরিমাণে ভাল গুণাগুণ সম্পন্ন ফল ধরানো ফলন বেশি করা। গাছ ছাটাই-এর সাথে ফল উৎপাদনের সরাসরি সংযোগ আছে । ছাটাই করে গাছের ডালপালার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়। সঠিকভাবে ও সময়মত ছাঁটাই করতে না পারলে ফলবতী গাছে ফলন কমে যায় এবং বেশি সময় ধরে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় । এমনকি ছাটাই বেশি হলে গাছ মারাও যেতে পারে । সঠিকভাবে ছাটাইয়ের ফলে গাছের পূর্ণ বিকাশ হয়, ফলের রঙ সঠিক হয়, ফলের আকার ভাল হয়, ফল বেশি হয় । এমনকি ফলের গুণগত মানান্নোয়ন হয় এবং গাছের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কমে যায় । ছাঁটাইকৃত গাছের ফল সংগ্রহ করা সহজ হয় এবং অন্যান্য পরিচর্যা করাও সুবিধাজনক হয় ।
এ কাজ করার জন্য একটি গাছের নিচে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। লেবু, পেয়ারা, ডালিম, কুল, গালাপজাম ইত্যাদি গাছের গোড়া থেকে লম্বা তেউগ উৎপন্ন হয় । এগুলো অন্যান্য ডালপালার নিচে থাকে এবং কলম করার উপযোগী নয়। এরা নিজেরা তেমন খাদ্য প্রভুত করতে পারে না । তাই এসব ডাল ছাটাই করা উচিত।
উপকরণ
১। ছুরি
২। সিকেচার
৩। ছাটাই ছুরি বা ডাল কাটার দা
৪ । গাছ ছাটাই করাত
৫ । ডাল কাটার কঁচি
৬। বড় গাছের ডাল কাটা কাঁচ বা পালে প্রনার
৭। ডেটল পানি
৮। খন্তা বা শাবল
৯ । কাতে বা কাঁচি
ছাটাই-এর প্রকারভেদ গাছ নির্বাচন
ক) ডালপালা ছাঁটাই এর উপযযাপী গাছ (কুল, কাঁঠাল, আম, লিচু, কামরাঙা, পেয়ারা ইত্যাদি)
খ) শিকড় ছাঁটাই এর উপযাগী গাছ (কাঁঠাল, লিচু, লেবু, কথবেল, জামরুল ইত্যাদি)
গ) ফল পাতলাকরণের উপযোগ গাছ পেঁপে, আমড়া, তরমুজ, জামরুল ইত্যাদি)
ঘ) পাতা ছাঁটাই এর উপযোগী (কলা, নারিকেল, খেজুর, তাল ইত্যাদি)
কাজের ধাপ
১ । ডাল ছাঁটাই এর যন্ত্রপাতি ধারাল, পরিষ্কার পরিছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে ।
২। ছোট, কম বয়স্ক এবং ফল উৎপাদন শুরু করেছে এমন গাছে শুধু ছোট ডালপালা কাটতে হবে । যা গাছের নিচের দিকে প্রধান কাণ্ড হতে বের হয়ে ছোট অবস্থায় থাকে। এছাড়া প্রধান প্রধান ডালা হতে ছোট ছোট ডালপালা বের হয়ে যেগুলো গাছের ভিতরমুখী হয়ে থাকে। সেগুলো কেটে ফেলতে হবে ।
৩। পুরাতন ও বড় গাছে ভারী আকারে ও বেশি পরিমাণে ছাঁটাই করতে হবে।
৪ । যে কোন গাছের বেলায় মৃত, রাগাক্রান্ত বা ঝড়ে ভাঙ্গা ডালপালা কেটে দিতে হবে ।
৫ । প্রচণ্ড খরা বা তীব্র শীতের সময় গাছের ডালপালা ছাটাই করা যাবে না ।
৬। যে সব গাছের পাতা ঝরে যায় সে সমস্ত গাছের পাতা ঝরার ১ মাস পরে অপ্রয়োজনীয় ডালা কেটে দিতে হবে।
৭। চিরসবুজ গাছের ফল পাড়ার পর পরই অপ্রয়োজনীয় ডালা কেটে দিতে হবে।
৮ । যে কোন গাছের প্রধান কাণ্ড হতে একই উচ্চতায় উভয় দিকে সামনাসামনি গজানো শাখার একদিকের সুস্থ ও সবল একটি ডালা রেখে প্রথমে অন্যটি কেটে দিতে হবে ।
৯ । পরবর্তীতে ঠিক উপরের দিকে প্রধান কাণ্ড হতে অনুরূপভাবে সাজানো শাখায় প্রথমে যেদিকে রাখা হয়েছে তার বিপরীত দিকেরটা রেখে অন্যটি কেটে দিতে হবে। এভাবে উভয়দিকে পর পর একান্তর ক্রমিকভাবে ডালা রেখে অন্যটি কেটে দিতে হবে। এতে গাছের ভারসাম্য রক্ষা হয় ।
১০ । ডালার যে স্থানে কাটা হবে তা প্রধান কাণ্ডের বা শাখা প্রশাখার পূর্ব সৃণি হতে ৫-০ সেমি. উপরে হতে হবে।
১১ । ডালা কাটার সময় প্রথমে ডালার নিচের দিকে ডালার ব্যাসের তিনভাগের একভাগ বা তার চেয়ে কম পরিমাণ কাটতে হবে । তারপর উপরের দিকে তিনভাগের দুই ভাগ কাটতে হবে । সম্পূর্ন ডালা কাটার পর কাটা স্থান সমান করে দিতে হবে।
১২ । কাটা স্থানে ছত্রাকনাশক বা আলকাতরার প্রলেপ দিতে হবে ।
১৩ । ছাঁটাই এর কাজ বৃষ্টিপাত বা মেঘলা আবহাওয়ার সময় করা উচিত না ।
১৪ । গভীর মূল বিশিষ্ট গাছের গোড়া হতে ১০০ থেকে ৩০০ সেমি. দূর দিয়ে নালা খনন করতে হবে । এতে নালার ভেতরের যে মূল কাটা পড়বে তাতেই মুল ছাটাই হবে । এই নালাটি গাছের চারিপাশ দিয়ে সম্পূর্ণ বৃত্তাকার, অর্ধবৃত্তাকার বা এক চতুর্থাংশ বৃত্তাকার হিসেবে করা যেতে পারে। তবে চওড়ায় বিভিন্ন মাপের হতে পারে।
১৫ । গাছের গোড়া হতে কিছু দুর দিয়ে মাঝে মাঝে গর্ত খনন করা হলে মমূল ছাটাই হবে । আবার সারা বাগান জুড়ে লাঙ্গলের সাহায্যে জমি চাষ করা হলেও অনেক মূল ছাটাই হবে ।
১৬ । ফল বেশি ঘন হলে বা একই বোটায় বেশি ফল ধরলে ছোট, দুর্বল এবং প্রধান বোটার পাশ দিয়ে বা বোটা হতে সরাসরি বের না হওয়া ফলগুলো কেটে দিতে হবে। তাতে অন্যান্য ফলগুলো বড় হবে ও আকার ভাল হবে।
১৭। পাতা ছাটায়ের জন্য সাধারণত ডালপালাহীন গাছের নিচের দিকে ঝুলে থাকা বয়স্ক পাতাগুলো গোড়াসমেত পরিষ্কার করে দিতে হবে । তবে পাতার গোড়া তাজা ও শক্ত থাকলে পুত্র ফলকের কিছু অংশ রেখে কাটতে হবে । এছাড়া ছোট চারা স্থানান্তরের সময় কিছু কিছু পাতাও কেটে দিতে হয় ।
আমড়া, নারিকেল, আঙ্গর ও লিচুর গুরুত্বপূর্ণ রোগ সনাক্ত ও রোগের নমুনা প্রদর্শন:
প্রাসঙ্গিক তথ্য:
রোগ জীবাণু উদ্ভিদ দেহে প্রবেশ করে সেখানে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করে । পোষাকের দেহের কোষ নষ্ট করে । খাদ্যরস গ্রহণ করে । উদ্ভিদের দৈনন্দিন কাজে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। এ অস্বাভাবিকতার বাহ্যিক প্রকাশকে আমরা রোগের লক্ষণ বলে (Symptom)। এটা বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পায়। যেমন পাতা পঁচা, পাতার দাগ, পাতা পাড়ো, কাণ্ডের দাগ। কাণ্ড পচা, ঢলে পড়া ইত্যাদি । আবার কোন কোন সময় রোগের এ বাহ্যিক লক্ষণের মধ্যে রোগজীবাণুর উপস্থিত থাকে । যেমন একটি পাতার দাগের মধ্যে রোগজীবাণুর পারে বা মাইসেলিয়াম খালি চোখে দেখা যায় । লক্ষণের মধ্যে রোগজীবাণুর আংশিক উপস্থিতিকে চিহ্ন বা সাইন বলে ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। রোগাক্রান্ত গাছের পাতা, ডাল, ফুল, ফল বা মূল ।
২। কাগজ, পেনসিল, রাবার।
৩। আমড়া, নারিকেল, আঙ্গুর ও লিচুর প্রধান প্রধান রোগের নমুনা ।
কাজের ধাপ
১। সংগৃহীত নমুনা (রোগাক্রান্ত, পাতা, ফুল, ফল, বাকল ও মূল) টেবিলে নিয়ে আসতে হবে ।
২। নমুনাটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে ।
৩ । নমুনার কোন অংশে রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তা খাতায় লিখে রাখতে হবে।
৪ । আক্রান্ত অংশের রং, আকার, আয়তন, ইত্যাদি লিখে রাখতে হবে ।
৫ । আক্রান্ত অংশে দাগ পড়লে দাগের সংখ্যা নিরুপণ করতে হবে ।
৬। লিখিত লক্ষণের সাথে প্রকাশিত বইয়ের লক্ষণের সামঞ্জসাতা মিলিয়ে দেখতে হবে।
৭ । রঙিন স্লাইড প্রদর্শিত হলে, স্লাইডগুলো ভাল করে দেখ, আক্রান্ত অংশের রঙের পরিবর্তন লক্ষ করতে হবে ।
৮ । পুক, ছবি হারবেরিয়াম শিট ও কাচের আধারে রক্ষিত নমুনার বৈশিষ্ট্য ও জীবাণুর বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে রোগকে নিশ্চিতভাবে সনাক্ত করতে হবে ।
সতর্কতা
১ । রোগাক্রান্ত পাতা ডাল, ফল বা মূল সংগ্রহের সময় রোগ না পোকার আক্রমণ বা অন্য কোন কারণ তা দেখে নিতে হবে ।
২। রোগাক্রান্ত নমুনাটি সংগ্রহের পরপরই পর্যবেক্ষণ করতে হবে । শুকিয়ে গেলে অনেক লক্ষণ চেনা নাও যেতে পারে ।
বোর্দো মিক্সচার প্রস্তুত পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য: এটি একটি তামাঘটিত অজৈব, খুবই জনপ্রিয় ও সবচেয়ে পুরাতন ছত্রাকনাশক । এ ঔষুধ বিভিন্ন মাত্রায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে । তবে সাধারণত শতকরা একভাগ ক্ষমতা সম্পন্ন বোর্দোমিক্সচার গাছে ছিটানো হয় ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। কুঁতে ২। চুন ৩ । পানি ৪। ২টি ছোট ও একটি বড় মাটির পাত্র ৫। ২টি বাঁশ বা কাঠের কাঠি ৬ । প্রেয়ার ৭ । একটি ইস্পাতের চাকু ।
কাজের ধাপ
১। কুঁতে ও চুন পৃথকড়াবে মিহি করে গুড়া করতে হবে ।
২। ছোট মাটির পাত্র দু'টিতে ৫ লিটার করে পানি নিতে হবে ।
৩। একটি পাত্রে ১০০ গ্রাম মিহি চূর্ণ কুঁতে ও অন্য পাত্রে ১০০ গ্রাম মিহি চূর্ণ চুন ঢেলে দিতে হবে ।
৪ । বাঁশের কাঠি দিয়ে পৃথক পৃথকভাবে ঘুটে নিতে হবে । ৮-১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে ।
৫ । অতঃপর দু'পাত্রের দ্রবণ বড় মাটির পাত্রে একসাথে ঢেলে নিতে হবে । পাত্রটি একটু ঝাঁকিয়ে নিতে হবে । এটাই বোর্দো মিক্সচার অর্থাৎ তৈরি মিশ্রণটি বোর্দো মিক্সচার ।
৬। মিক্সচারের রঙ পরীক্ষা করতে হবে ।
৭। মিশ্রণের রঙ গাঢ় নীল হলে মিশ্রণ সঠিক হয়েছে বুঝতে হবে। সবুজ রঙ বা সাদাটে হলে বুঝতে হবে যথাক্রমে পুঁতে বা চুন বেশি হয়েছে । ৮। বোর্দো মিক্সচার এখন স্প্রে করতে পারবে।
সতর্কতা
১। কুঁতে ও চুন মিহি করে চূর্ণ হয়েছে কি না ভাল করে দেখে নিতে হবে। চূর্ণ করার পর তঁত ও চুন সঠিক ভাবে মেপে নিতে হবে।
২। বোর্দো মিক্সচার তৈরির ২-৩ ঘন্টা মধ্যে স্প্রে করতে হবে ।
৩ । প্রস্তুতকৃত বোর্দো মিক্সচার ইস্পাতের চাকুর অগ্রভাবে ডুবিয়ে দেখো লালচে দাগ পড়ে কি না। না পড়লে বুঝবে মিশ্রণ ঠিক হয়েছে।
পোকা মাকড় সংগ্রহের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ফলের উপকারী ও অপকারী পোকা মাকড় চেনা এবং এ পোকা ক্ষতির ধরন সম্পর্কে জানা, যাতে করে এ পোকা দমনের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেয়া যায় ।
উপকারী পোকা মাকড় শনাক্তকরণ প্রাসঙ্গিক তথ্য
যে সকল পোকা মাকড় প্রত্যক্ষ বা পরাক্ষেভাবে মানুষের কোন না কোন উপকার করে সে সকল পোকাগুে লাকেই উপকারী পোকা বলে ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১। পোকা ধরার জাল ২। পানির পাত্র ৩। ড্রইং পেপার ৪। পেন্সিল ৫। রাবার ৬। ফরসেপ ৭। স্কেল ৮। ইনসেক্ট কিলিংজার ৯ শস্যক্ষেত (ফলের গাছ/ফলের বাগান) ১০। পেট্রিভিস বা ছোট পার্টিক কৌটা ।
কাজের ধাপ
১। পোকা ধরার জাল নিয়ে শস্য ক্ষেতে যেতে হবে (কলা, পেঁপে, আনারস, আম, পেয়ার, লিচু, কাঁঠাল, লেবু ইত্যাদি বাগান
২। জল যারা পোকা ধরতে হবে।
৩। পানির পাত্রের সাহায্যে পোকা ধরতে হবে ।
৪। এরপর পোকা গুলো ইনসেক্ট কিপিং জারে অথবা (ক্লোরাফের্ম দ্বারা ভেজাভুলা বিশিষ্ট কাচের পাত্র কিছুক্ষণ ঢাকনা বন্ধ করে রাখতে হবে। এতে পোকাগুলো মারা যাবে ।
৫। এবার জার থেকে মৃত পাকাগুলো বের করতে হবে।
৬। মৃত পোকাগুলো ভালোভাবে প্রত্যক্ষ করতে হবে।
৭। সংগৃহীত পোকাগুলো বইয়ে দেয়া বর্ণনার সাথে মিলিয়ে কোনটি কি পোকা তা সনাক্ত করতে হবে ।
৮ । এখন ড্রইং পেপারে সনাক্তকৃত পোকা গুলোর চিত্র অঙ্কন করতে হবে।
৯। অতপর অঙ্কিত পোকার চিত্রে এর বিভিন্ন উপাঙ্গ চিহ্নিত করতে হবে।
সতর্কতা
১। কিপিং বাতেল সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। এটি যাতে ভেঙ্গে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে । কিলিং বোতলে ভুলেও শ্বাস নেয়া বা গন্ধ শুকা যাবে না।
প্রাসঙ্গিক তথ্য
ফসলের ক্ষতিকর পোকা মাকড় সনাক্তকরণের একটি সহজ উপায় হলো নমুনা স্থাপন কাগজের বা হারবেরিরাম সিটের অ্যালবাম তৈরি। এতে সংগৃহীত ক্ষতিকর পোকার শুদ্ধ নমুনা থাকে এবং তার পাশে নামসহ সনাক্তকণের বৈশিষ্ট্য লেখা থাকে। এতে ব্যবহারিক শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের অনুশীলনের জন্য সংরক্ষিত নমুনা অত্যন্ত কাজে লাগে। শিক্ষার্থীরা ফসলের ক্ষতিকর প্রধান প্রধান পোকার নাম জানা, চেনা ও সনাতকরণের কাজ অতি অল্প সময়ে সহজেই করতে পারে ।
হারবেরিয়াম শিটের একটি অ্যালবাম তৈরির একটি নমুনা নিচে সেরা হলো
পোকার নমুনা নং | পোকার নাম (বৈজ্ঞানিক নাম ও গোত্র সহ) | আক্রান্ত ফসল | ক্ষতির প্রকৃতি ও লক্ষণ | অন্যান্য বৈশিষ্ট্য |
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১ । নমুনা পোকা ২ । বোর্ড কাগজযুক্ত বড় খাতা ৩। কলম ৪ । কসটেপ ৫। বড় পুরাতন খবরের কাগজ বা চোষ কাগজ ৬ । পোকা ধরার হাত জাল ৭ । কিলিং জার ৮। পেট্রিডিস ৯। ফরসেপ বা চিমটা ১০। ক্লোরফম ইত্যাদি দ্বারা ভেজা তুলা ১১। স্কেল ১২। ফসলের ক্ষেত বা বাগান ইত্যাদি ।
কাজের ধাপ
১। ফসলের ক্ষেত বা বাগান হাতে হাতে জাল বা অন্যকোন যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পোকা ধরে সংগ্রহ করতে হবে।
২। সংগৃহীত পোকা কিলিং জারে রেখে মেরে ফেলতে হবে ।
৩। কিলিং জার হতে মৃত পোকা বের করে পেট্রিডিসে নিতে হবে ।
৪ । পেট্রিডিস হতে সংগৃহীত পোকাগুলো একে একে পুরাতন খবরের কাগজ বা বড় বই-এর ভাজে রেখে শুকাতে হবে ।
৫ । কয়েক দিন পর পোকাগুলো বের করে নিতে হবে।
৬। প্রাসঙ্গিক তথ্য সারণি অনুযায়ী খাতায় ছক কেটে শিরোনামগুলো লেখে নিতে হবে ।
৭ । পোকার নমুনার শিরোনামের নিচে এক এক করে একাধিক পোকা স্কচটেপ দিয়ে লাগাতে হবে ।
৮ । শিরানোম অনুসারে বৈশিষ্ট্যগুলো পর্যবেক্ষণ কার প্রতিটি পোকার সামনের ঘরগুলো লিখতে হবে ।
৯ । এভাবে প্রতি পৃষ্ঠায় একাধিক ক্ষতিকর পোকার নমুনা লাগিয়ে হারবেরিয়াম বা এলবাম তৈরি করতে হবে ।
সতর্কতা
১। একটি পোকার নমুনার উপর আর একটি পোকার নমুনা লাগানো যাবেনা ।
২। পোকা চাপ খেয়ে ভালোভাবে শুকানোর পর লাগাতে হবে ।
৩ । উন্নত মানের হারবেরিয়াম সিট ও কচ টেপ ব্যবহার করতে হবে।
আরও দেখুন...